আবারও একদিনে শনাক্ত সাড়ে ৭ হাজার, মৃত্যু কমেছে

গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছেন সাত হাজার ৪৬২ জন। গতকাল শনাক্ত হয়েছিলেন ছয় হাজার ৮৫৪ জন। নতুন শনাক্ত হওয়াদের নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে করোনা শনাক্ত হলেন ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যু কমেছে । গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৩ জন, গতকাল মারা গিয়েছিলেন ৭৪ জন।

মারা যাওয়া ৬৩ জনকে নিয়ে দেশে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেলেন ৯ হাজার ৫৮৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৫১১ জন, তাদের নিয়ে দেশে করোনা থেকে এখন পর্যন্ত সুস্থ হলেন পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ মার্চ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে করোনা শনাক্ত হন ৫ হাজার ১৮১ জন, সেই রেকর্ড ভেঙে ৩১ মার্চ শনাক্ত হন ৫ হাজার ৩৮৫ জন। ১ এপ্রিল ফের শনাক্ত দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪৬৯ জন। ২ এপ্রিল দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮৩০ জন। এরপর ৪ এপ্রিল সব রেকর্ড ভেঙে সাত হাজার ছাড়িয়ে একদিনে শনাক্ত হন ৭ হাজার ৮৭ জন। ৫ এপ্রিল শনাক্ত হন ৭ হাজার ৭৫ জন। ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ৭ হাজার ২১৩ জন। এর পরদিন বুধবার শনাক্ত হন ৭ হাজার ৬২৬ জন; যেটা এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ এবং ৮ এপ্রিল শনাক্ত হন ৬ হাজার ৮৫৪ জন। এই হিসাবে আজ শুক্রবার করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হলেন।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যু হার এক দশমিক ৪২ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৩১ হাজার ৮৭৯ টি এবং পরীক্ষা করা হয়েছে ৩১ হাজার ৬৫৪ টি। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৪১২টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৭ লাখ পাঁচ হাজার ২৩৪ টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ লাখ ৪২ হাজার ১৭৮টি।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৬৩ জনের মধ্যে পুরুষ ৪৩ জন আর নারী ২০ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত পুরুষ মারা গেছেন সাত হাজার ১৭৩ জন এবং নারী মারা গেছেন দুই হাজার ৪১১ জন। শতকরা হিসাবে পুরুষ ৭৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং নারী ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।

তাদের মধ্যে বয়স বিবেচনায় ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ৩৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আছেন ১৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে চার জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে পাঁচ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে আছেন দুই জন।

আরও পড়ুন>> সর্বাত্মক লকডাউনে ‘কিছুই চলবে না’, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সব বন্ধ ঘোষণা

করোনার বিস্তার ঠেকাতে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) দুপুরের পর তিনি সময় সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সকল গণপরিবহণও বন্ধ থাকবে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই কঠোর লকডাউন। করোনার ঊর্ধ্বগতি ঠেকানোর জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।

এর আগে, দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে আরও এক সপ্তাহের লকডাউনের কথা ভাবছে সরকার। এমনটা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার সকালে সরকারি বাসভবন থেকে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। বেড়েছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমতাবস্থায় সরকার জনস্বার্থে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।

চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনে জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না বলেও জানান তিনি।

এর আগে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আর মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি রুখতে সারাদেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে সাত দিনের লকডাউন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণের শেষ অস্ত্র লকডাউনের সুফল পেতে রোগী শনাক্ত, আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতসহ রোগ-প্রতিরোধের বিজ্ঞানভিত্তিক সব ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে হবে।

লকডাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক শক্তি আর ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই।

প্রতিদিনই কোভিড সংক্রমণের নতুন নতুন রেকর্ড ভাঙছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। ফেব্রুয়ারিতে দুই শতাংশের ঘরে থাকা সংক্রমণ হার লাফিয়ে বাড়তে বাড়তে এখন ছাড়িয়ে গেছে ২৩ শতাংশে। করোনার ধাক্কায় যখন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার উপক্রম তখন বছর ঘুরে আবারো লকডাউনে বাংলাদেশ।

দেশে করোনার এমন ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৫ এপ্রিল ভোর ছয়টা থেকে থেকে আগামী ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ