সুপারভাইজার ও সেই ধর্ষিত নারীকে নিয়ে যা বললেন সাবেক স্বামী

কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেসের চলন্ত বাসে গণডাকাতি ও ধর্ষণের শিকার নারী ওই একই বাসের সাবেক সুপারভাইজার ইসমাঈল হোসেন ভোলার সাবেক স্ত্রী। বিয়ের ৭ দিনের মাথায় তাদের বিচ্ছেদ হলেও ভোলার হেলপার বর্তমান সুপারভাইজার রাব্বি হোসেনের সঙ্গে ধর্ষিতা নারীর পরিচয় রয়েছে।

বাসের গণডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে পাবনার ঈগল এক্সপ্রেসের মালিক সোলায়মান হক এবং ইসমাঈল হোসেন ভোলার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভোলা পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা বাজার সংলগ্ন মুন্নাত আলীর ছেলে। চালক মনিরুল ইসলাম কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়ার প্যারাকপুর, সুপারভাইজার রাব্বি হোসেন পাবনার রাধানগরের যুগিপাড়া এবং হেলপার দুলাল মিয়া পাবনার সদর উপজেলার মালিগাছার টেবুনিয়ার সিট গোডাউন এলাকার বাসিন্দা। আর ধর্ষিত ওই নারী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দা।

বর্তমানে পাবনা-রংপুরগামী রাজা-বাদশা বাসের সুপারভাইজার সমাঈল হোসেন ভোলা পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘প্রায় ৪ বছর আগে ধর্ষিতা নারীর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়, কিন্তু মাত্র ৭ দিনের মাথায় আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে আমার ওই স্ত্রীর সঙ্গে কোনও প্রকার যোগাযোগ নেই। তবে আমি ঈগল এক্সপ্রেসের সুপারভাইজার থাকা অবস্থায় আমার হেলপার (বর্তমান সুপারভাইজার) রাব্বির সঙ্গে আমার ওই স্ত্রীর পরিচয় ছিল।’

তিনি বলেন, ‘শুনেছি- আমার ওই স্ত্রী শুধুমাত্র রাব্বির বাসেই চলাচল করে, অন্য কোনও বাসে সে যায় না। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও আছে বলে আমি জেনেছি। হয়তো তাদের মধ্যে কিছু একটা সম্পর্ক থাকতে পারে।’

তবে ভোলার প্রশ্ন কেন প্রতিবারই তার সাবেক স্ত্রী রাব্বির বাসেই চলাচল করে। ডাকাতরা এতো যাত্রী থাকতে কেন তাকেই ধর্ষণ করল?

বাস মালিক সোলায়মান হক পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘বাসের বর্তমান চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারের সঙ্গে ইসমাঈল হোসেন ভোলার ভালো সম্পর্ক আছে, তাদের মধ্যে কোনও ঝামেলা নেই। তারা সবাই ভালো ছেলে। মাদকসহ কোনও ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত নেই।’

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরতি পথে পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া মোড়ে ওই দিনের আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়ে সর্বশেষ কথা হয়। এরপর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ফিরে সেখান থেকে বাসটি রাত সাড়ে ৭-৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পথে একবার তার সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। এরপর রাত ৩টার দিকে অপরিচিত একটি নাম্বার দিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায় সুপারভাইজার।’

সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, ‘২৪-২৫ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দেয়, পথে সিরাজগঞ্জের নাইটেঙ্গেল হোটেলের আগে থেকে ৪ জন, হোটেল পার হয়ে ৩ এবং এর কিছুদূর গিয়ে আরও ৩ জন মোট ১০ জন টিকিটবিহীন যাত্রী ওঠানো হয়। পরে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর পাকুল্লা থেকে ডাকাতরা যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে মারধর করে যাত্রীদেও জামা-কাপড় দিয়েই তাদের হাত-মুখ ও চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর তারা চালককে মারধর করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি ও ধর্ষণ করে। এরপর ডাকাতরা মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ার একটি বালুর ঢিবিতে বাসটি কাত করে রেখে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী ঈগল এক্সপ্রেসের একটি বাসে ডাকাতি ও এক যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এঘটনায় ডাকাতি ও ধর্ষণের মূলহোতা রাজা মিয়া নামের একজনকে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এদিকে ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডাক্তারি পরীক্ষার পর বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুনের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ধর্ষিতা নারী।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ