আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই পাবনায় ইউপিতে ২২টি পদে নিয়োগ

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে পাবনার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের ২২টি পদে হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার পদে নিয়োগ ও ইউডিসি উদ্যোক্তাদের অব্যহতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। রোববার (২৮ জুন) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাকের ভিআইপ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পাবনা-৩ এলাকার উদ্যোক্তা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহীন কাওছার।

লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার সকল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তা হিসেবে তারা দশ বছর ধরে কাজ করে আসছিলেন। তারা ইউনিয়ন পরিষদের সকল সরকারি দাপ্তরিক কাজসহ নামমাত্র মুল্যে সাধারণ মানুষের সেবা করে প্রদান করছিলেন। তাদের কোনো সরকারি বেতন ভাতা দেয়া হয়নি। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের সরকারি চাকুরীর বয়সসীমাও পার হয়ে যায়।

এর মধ্যে ২০১৬ সালে সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদে নতুন পত সৃষ্টি করে হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই প্রজ্ঞাপন জারীর পর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার  জাতীয় ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সরকারের সাথে যোগাযোগ করে উক্ত পদে সরাসরি উদ্যোক্তাদের নিয়োগ ও ডিজিটাল সেন্টার জাতীয়করণের দাবি জানান। কিন্তু সেই আবেদন ও দাবি উপেক্ষা করে উদ্যোক্তাদের বাইরে নতুনদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।

তার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনার ৭৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪১টি ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। এমন অবস্থায় পাবনার উল্লেখত তিন উপজেলার ২২ জন উদ্যোক্তা উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং ১৫৪৭৫/২০১৭। আদালত রীট পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারী করেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সম্প্রতি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে।

সেইসাথে বাকি ৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। উপায় না দেখে রীটকারীরা তাদের আইজনীবিদের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে আপিল করে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেন। তার প্রেক্ষিতে একই বছরের ২০ নভেম্বর আদালতের বিচারক এফ আর এম নাজমুল আহসান ও কে এম কামরুল কাদের আদেশ দেন আবেদনকৃত রীটকারীর ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ সংরক্ষণ করে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হোক।

 সেইসাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পিটিশনকারীদের চাকুরী রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও তাদের নিয়োগ নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে বহাল রাখা হোক। কিন্তু পাবনার জেলা প্রশাসন আদালতের নির্দেশ অমান্য করে গত ২৫ জুন রীটের ৬টি সংরক্ষিত ইউনিয়ন পরিষদে ৬ জন হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদায়ন সম্পন্ন করেছেন।

এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দশ বছর ধরে কাজ করে আসা উদ্যোক্তারা। এজন্য নতুনদের নিয়োগকে অনিয়ম উল্লেখ করে সেটি বাতিল করে সেখানে রীটকারীদের নিয়োগের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, জেলার ৭৪টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে আমরা ৪১টি ইউনিয়নের নিয়োগ সম্পন্ন করেছি। আদালত আমাদের ২৬টি ইউনিয়ন রিজার্ভ রাখতে বলেছেন, আমরা সেটি রেখেছি। আদালতের নির্দেশ মেনে কাজ করেছি। বরং আদালত ২৬টি রিজার্ভ রাখতে বললেও আমাদের আরো বেশি রিজার্ভ রয়েছে। ৩৩টি এখনও ফাঁকা রয়েছে। আদালত যা বলবে আমরা সেটাই মানবো। এখানে অনিয়মের কিছু নেই। খুবই স্বচ্ছতার সাথে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং সেটি প্রশংসিত হয়েছে।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ