পাবনা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ইছামতী নদীর দুই পারের অবৈধ দখল উচ্ছেদের নির্ধারিত দিন ছিল আজ ৩১ মার্চ (বুধবার)। কিন্তু, অনেক প্রত্যাশিত পূর্ব ঘোষিত এই উচ্ছেদ অভিযান আজ শুরু হয়নি।
বুধবার (৩১ মার্চ) সকাল থেকে নদীর লাইব্রেরি বাজার এলাকার ব্রিজ থেকে উচ্ছেদের কথা ছিল, কিন্তু এদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতে দেখা যায়নি। নির্ধারিত স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসনের কাউকে পাওয়া যায়নি।
ঠিক কি কারণে পাবনাবাসীর স্বপ্নের এই অভিযান শুরু হয়নি- তা জানা যায়নি। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে নদী রক্ষা আন্দোলন ও প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসন অভিযান শুরু করতে বদ্ধপরিকর। কিছুটা বিপত্তি ঘটায় প্রথম দিন শুরু করা যায়নি। অভিযান শুরু করতে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আগামীকাল অভিযান শুরু করার চেষ্টা করছে পাউবো ও জেলা প্রশাসন।
এর আগের দিন মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) সকালে হাউজ পাড়া ব্রিজ এলাকা থেকে নদীর পাশ দিয়ে হাঁটার রাস্তা নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স। ২০১৯ সালে হাউজ পাড়া ব্রিজ থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছিল পাউবো।
এসময় সাংসদ গোলাম ফারুক প্রিন্স উপস্থিত জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে ইছামতী নদীর বর্তমান বাসিন্দাদের মধ্যে যাদের ‘বৈধ কাগজপত্র’ আছে, সেগুলো যাছাই-বাছাই করে দেখা এবং যাদের কাগজপত্র নেই তাদেরকে সরকারের বিভিন্ন পুনর্বাসন বা আবাসন ব্যবস্থায় কোনও কিছু করা যায় কি-না সে ব্যাপারে অনুরোধ করেন।
এরপর দুপুরের দিকে শহরের আব্দুল হামিদ রোডে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের দাবিতে আমরণ অনশনরত নদীর বাসিন্দাদের ‘আশ্বাস’ দিয়ে অনশন ভাঙান সাংসদ গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে গত ১০ মার্চ জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ ঘোষণা দেন, আগামী (আজ) ৩১ মার্চ ইছামতি নদীর লাইব্রেরি বাজার ব্রিজ থেকে মেরিল বাইপাস পর্যন্ত দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং মন্ডলপাড়া ব্রিজ থেকে মেরিল বাইপাস পর্যন্ত খনন কাজ শুরু করা হবে।
তিনি সেদিন আরও বলেন, পাবনাবাসীর প্রাণের দাবি পাবনার ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদী খনন কাজে কোন রকম অনিয়ম করতে দেওয়া হবে না। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা চিহিৃত করা হবে। সীমানা পিলার বসায়ে দেওয়া হবে।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী, কয়েকদিন ধরে নদী পারে মাইকিং করা হয়। এতে ঘোষণা করা হয়, ‘যারা নদীর জায়গায় আছেন তারা নিজেরা সরে যাবেন। তা নাহলে উচ্ছেদ করতে হলে উচ্ছেদের খরচ সংশ্লিষ্ট দখলদারদের বহন করতে হবে। প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এরপরই নরেচড়ে বসে নদীর দুই পারের বাসিন্দারা। স্থানীয় সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসকসহ কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। নিজেদের বৈধ দাবি করে তাদের দখলে থাকা জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের জোরালো দাবি জানান। বিক্ষোভ-মানববন্ধনের পর গত সোমবার (২৯ মার্চ) থেকে শহরের এ আর কর্ণার প্রাঙ্গণে আমরণ অনশনে বসেন নদীপারের বাসিন্দারা।
ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলনের সভাপতি এস এম মাহবুব আলম পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, আমাদের দাবি মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ মতে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী ইছামতি নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও খনন করতে হবে। আশা করি- প্রশাসন সব বাধা পেরিয়ে উচ্ছেদ ও খনন কার্যক্রম সফল করবেন।
উল্লেখ্য, পাবনা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত পাঁচ কিলোমিটার বদ্ধ ইছামতি নদী প্রায় দুই লাখ শহরবাসীর ব্যবহৃত বর্জ্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এক সময়ের ‘তন্বী ইছামতী’ এখন দখল ও দূষণে মৃত প্রায়। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটির অর্ধেকের বেশি জায়গা এখন প্রভাবশালীদের দখলে। দীর্ঘ দিন ধরে এ জেলার মানুষ নদীটি দখলমুক্ত করে খননের দাবিতে আন্দোলন করছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের শিবরামপুর থেকে পৌর এলাকার শালগাড়িয়া শ্মশানঘাট পর্যন্ত পাাঁচ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট নদী দখল হয়ে গেছে। ২০০৩ সালে জেলা প্রশাসন নদীর এই এলাকায় ২৮৫ জন দখলদারকে চিহ্নিত করে। দখলদারদের মধ্যে আইনজীবী, ব্যাবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ রয়েছেন।
দখলের তালিকায় ১০৭টি সেমিপাকা বাড়ি, ১৬ টিনশেড বাড়ি, ৪৫টি একতলা ভবন, ১৮টি দোতলা ভবন ও ৮টি তিনতলা ভবন রয়েছে। বাকি দখলদারেরা দোকান, বাড়ির সীমানাপ্রাচীরসহ বিভিন্নভাবে ইছামতী দখল করেছেন। ফলে নদীটি রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পাউবো কিছুদিন ধরেই এসব দখলদার উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে।