দেশব্যাপী আলোচিত পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘আচরণবিধি’ নিয়ে পাবনা-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সকে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচন কমিশনার ও ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা কায়সার মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। শনিবার (১১ জুন) সকালে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কায়সার মোহাম্মদ।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ এর বিধি ২২ এর (১) ও (২) অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তথা মাননীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করতে আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হল।
এবিষয়ে পাবনা সদর-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, হ্যাঁ, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি তখন ঢাকায় ছিলাম, চিঠিটি আমার লোকজন রিসিভ করেছে। সম্প্রতি সেখানকার একটি স্কুলের প্রোগ্রামে আবু সাঈদ খান এসেছিল। যেহেতু সে দলীয় প্রার্থী এবং দলীয় পদে রয়েছে সেহেতু নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে হয়তো অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ দিয়েছিল যার ফলে নির্বাচন কমিশন এই চিঠি দিয়েছে। সংসদ সদস্য হলেও আমি আইনের উর্ধে নয়।’
আগামীকাল রবিবার (১২ জুন) নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খানের নির্বাচনের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। এর আগে গত ৩ জুন সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের খতিব আব্দুল জাহিদ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ মাঠে বিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধনের ব্যানারে নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খানের নির্বাচনি সভায় নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধন করলেও মূল আকর্ষণ কিন্তু নির্বাচনি জনসভা। আগামী ১৫ জুন নৌকাকে বিজয়ী করে জননেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি। গত ২৬ ডিসেম্বর সদরের ৯ টি ইউনিয়নে নৌকার পরাজয় হলেও ভাঁড়ারাতে নৌকাতে জিততে হবে। নৌকার জেতানোর জন্য আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়ুন।’
এই সভার পর পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের নৌকার বিদ্রোহী ঘোড়া মার্কা প্রতীকের সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, এমপি সাহেব খতিব জাহিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিল্ডিং উদ্বোধনের নামে নির্বাচনী সভা করে গেছেন। নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। সভায় অন্তত ২/৩ হাজার মানুষ হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী উনি এভাবে তো সভা করতে পারেন না। উনার উপস্থিতিতে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা আমাদের নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন।
পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়ছার মোহাম্মাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে, সরকারের সুবিধাভোগী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না বা অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছি। চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। নির্বাচনি এলাকায় না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পাবনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। একজন এমপি এভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সমাবেশ বা নির্বাচনী অনুষ্ঠানে ভোট চাইতে পারেন না। গত ৩ জুন একটি বিদ্যালয়ে বিল্ডিং উদ্বোধন করতে গিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান। বিষয়ট স্থানীয়ভাবে জানানো হলো এমপি মহোদয়কে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনি এলাকায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ভাড়ারা ইউনিয়ন একটি ক্রিটিক্যাল জায়গা সেখানে প্রার্থীকে হত্যা করায় নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছিল। সব প্রার্থীকে নির্বাচনি আচরণবিধি অনুসরন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ খান (৫২) ওরফে সাঈদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম (৩৫) নিহত হন। এঘটনায় ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পাবনা জেলার সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সব (চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য) পদের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন থেকে ১৫ জুন নির্বাচন করতে তফসিল ঘোষণা করেন।