আমাদোর মাথার ওপর দিয়ে আকাশে বিমানর ওড়ে। বিমান ওড়ার সময় আকাশে ধেঁয়ার মতো দেখা যায়। যা অনেকটা সাদা দাগের মতো। অনেকের মনেই এ আকাশে সাদা দাগ নিয়ে কৌতুহল রয়েছে।
সাধারণ মানুষ মনে করেন এগুলো বিমানের ইঞ্জিনের ধোঁয়া। এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক। কেন না বাস, ট্রেন, জাহাজ ধোঁয়া উড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু বিমানের হিসাবটা আলাদা।
বিমানে জ্বালানির বিক্রিয়ার ফলে পিছন দিক দিয়ে জলীয় বাষ্প উপজাত হিসেবে বের হয়। এই জলীয় বাষ্প বাইরের ঠান্ডা বায়ুর সঙ্গে মিশে এক ধরনের ফাঁপা ধোঁয়ার মত পুরু সাদা আস্তরণ তৈরি করে। এটাকে কন্ট্রেইল বলে। শীতের দিনে শ্বাস ছাড়লে যে ধোঁয়ার মত দেখা যায়, এটা অনেকটা সেরকম। আপনি কি ছোটবেলায় আকাশে প্লেনের পেছনে এরকম সাদা ধোঁয়ার মত দেখলে ‘রকেট’ মনে করতেন?
জেট বিমান থেকে উষ্ণ, আর্দ্র গ্যাসীয় পদার্থ নির্গত হয়। নির্গত গ্যাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, সালফারের বিভিন্ন অক্সাইড, নাইট্রোজেন, ভুসা, অব্যবহৃত জ্বালানি প্রভৃতি থাকে। কিন্তু অধিক উচ্চতায় বায়ু চাপ এবং তাপমাত্রা জেট বিমান থেকে নির্গত গ্যাসের তুলনায় অনেক কম থাকে। ফলে নির্গস গ্যাসে বিদ্যমান জলীয় বাষ্প নিম্ন তাপমাত্রায় ঘনীভূত হয়ে জমে যেতে শুরু করে। যা সাদা মেঘের মত অবস্থা সৃষ্টি করে।
একে দূর থেকে দেখলেই আমাদের কাছে সাদা দাগের মত মনে হয়। জেট বিমানের সাদা মেঘের রেখা সৃষ্টি আর শীতকালে আমাদের নিঃশ্বাসের ধোঁয়া দেখতে পাওয়াটা প্রায় একই রকম। শীতকালে মুখ থেকে বের হওয়া উষ্ণ জলীয় বাষ্প ঠান্ডায় ঘনীভূত হয়ে যায় বলেই ধোঁয়ার মত দেখা যায়।
সাদা দাগ এর পরিমাণ, পুরুত্ব এবং স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিমান চলাচলের উচ্চতা, সেই পরিবেশের তাপমাত্রা ও জলীয়বাষ্পের পরিমাণের উপর। এমনকি বিমান দ্বারা সৃষ্ট সাদা দাগের ধরন থেকে আবহাওয়া সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
পাতলা ও স্বল্পস্থায়ী রেখা নির্দেশ করে ওই উচ্চতায় জলীয় বাষ্প কম, তার মানে আবহাওয়া স্বাভাবিক। অন্যদিকে পুরু ও দীর্ঘস্থায়ী সাদা দাগ নির্দেশ করে ঐ উচ্চতায় অধিক জলীয় বাষ্প বিদ্যমান, এর মানে বৃষ্টি ও ঝড় হতে পারে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে জেট বিমানের এই সাদা বলয় রেখা গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নেও ভূমিকা রাখে।